রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে এক কৃষক পরিবারে একাধিক দফা হামলা, মারধর ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় নারীসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত এক নারী বর্তমানে চিকিৎসাধীন থাকায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী কৃষক মো. জয়নাল আবেদীন (৪৮) অভিযোগ করেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের জমি বিরোধের জেরে গত ১০ ডিসেম্বর সকালে প্রথম দফা হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিন সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে তার বাড়ির সামনে থাকা একটি বেল গাছ থেকে জোরপূর্বক বেল পাড়তে গেলে তিনি বাধা দেন। এতে অভিযুক্ত মো. রিফাত (১৯) ও মোছা. রজিনা (৩০) তাকে গালিগালাজ ও মারধর করেন। এ সময় তাকে বাঁচাতে গেলে তার কন্যা মোছা. শিরিনা খাতুন নিলা (১৪)ও আহত হয়।
অভিযোগে বলা হয়, একই দিন দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে অভিযুক্তরা আবার জয়নাল আবেদীনের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় মো. আ. রশিদ (৬৫) হামলার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর মো. নওশাদ (৫০) বাঁশের লাঠি দিয়ে জয়নাল আবেদীনকে মারধর করেন। স্বামীকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে তার স্ত্রী মোছা. সাবিনা (৩৫)-কে মো. মুসাদ (৪০) হাতে থাকা হাসুয়া দিয়ে মাথার বাম পাশে কোপ দেন। এতে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন। অভিযোগে আরও বলা হয়, মোছা. শিল্পী (৩০) ও মো. এমরান (২২)ও মারধরে অংশ নেন।
স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আহতদের মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক গুরুতর আহত মোছা. সাবিনাকে ভর্তি করেন এবং জয়নাল আবেদীন ও তার কন্যাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন।
এ ঘটনায় জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে মোহনপুর থানায় মামলা করেন (মামলা নং-০৬, তারিখ: ১০/১২/২০২৫)। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, মামলার কয়েকজন আসামি জামিনে মুক্ত হয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে সংঘবদ্ধভাবে তার বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা ঢিল নিক্ষেপ, দরজা-জানালার গ্রিল ভাঙচুরের চেষ্টা এবং বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেয়। পরদিন বিষয়টি থানাকে অবহিত করে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদীন জানান, তার স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দেওয়ায় ১০ থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার সাক্ষীদেরও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুকুল চন্দ্র জানান, মামলার পরপরই প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিরা জামিনে রয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তায় পুলিশ নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকার সচেতন মহল সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
মোহনপুর প্রতিনিধিঃ